ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরদিন গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় নেমে আসতে শুরু করেন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এসব স্থানের মধ্যে ছিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড়ও। হিন্দুরা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে তড়িঘড়ি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সে সময় ৫ থেকে ৮ আগস্ট হিন্দুদের বেশ কিছু বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলার অভিযোগ এনে রাস্তায় নেমে আসেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এসব মানুষ।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের মতো সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর ডাকে সাড়া দিয়ে এসব বিক্ষোভে অংশ নেনবিক্ষোভকারীদের স্লোগানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া ও তাঁদের ব্যাপারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। তবে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের কারও কারও মুখে ছিল, ‘জয় শ্রী রাম’ (রামের জয়) স্লোগান। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত একটি স্লোগান এটি।
বিক্ষোভের তৃতীয় দিন (৯ আগস্ট শুরু), ১১ আগস্ট বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ (বিএইচজেএম) নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। নিহার হালদার, জুয়েল আইচ অর্ক, জয় রাজবংশী, রনি রাজবংশী ও প্রদীপ কান্তি দে সংগঠনটির সমন্বয়ক ও প্রধান মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। এদিনই গঠিত হয় বিএইচজেএমের ফেসবুক গ্রুপও।
ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সহযোগী সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের (এইচজেএম) সঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের (বিএইচজেএম) নামের অদ্ভুতভাবে মিল রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আদর্শিক সাংগঠনিক গুরু হলো আরএসএস। এইচজেএমের অনেক নেতাই বিজেপির হয়ে কাজ করেন।
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভারতে প্রথম বিক্ষোভ করে এইচজেএম। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এ বিক্ষোভ হয়; এমনকি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূস শপথ নেওয়ার আগেই।
পরবর্তী সপ্তাহগুলোয় বাংলাদেশের প্রচলিত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলো পর্দার আড়ালে চলে যায়। সেই সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে উত্থান ঘটে নতুন প্ল্যাটফর্ম বিএইচজেএমের।
এ প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকেরা সবাই বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র মহাজোট ও হিন্দু যুব মহাজোটের সঙ্গে যুক্ত। এই দুই সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (বিজেএইচএম) যথাক্রমে ছাত্র ও যুব শাখা। ২০০৬ সালে ঢাকায় গঠিত হয় হিন্দু অধিকার সংগঠন বিজেএইচএম। বাংলাদেশের অনেকে মনে করেন, এই সংগঠনের ভেতরেই এ দেশের হিন্দুত্ববাদের শিকড় নিহিত।
বিজেপি ও এইচজেএমসহ আরএসএসের সহযোগী দল বা সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে সংঘ পরিবার বা আরএসএস পরিবার হিসেবে ডাকা হয়। হিন্দুত্ববাদ হলো এদের স্বঘোষিত আদর্শ। এ আদর্শকে এরা ‘হিন্দু সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ বলে আখ্যা দেয়।
এসব সংগঠন যদিও এদের আদর্শকে জাতীয়তাবাদ হিসেবে তুলে ধরে থাকে, প্রকৃতপক্ষে তা ভারতীয়দের ভৌগোলিক সীমানায় আটকে নেই। সংঘ পরিবার তার অখণ্ড ভারত বা অবিভক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার যে ধারণা, সেটিই প্রচার করে থাকে। এ ধারণায় এরা আফগানিস্তান থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার, নেপাল ও তিব্বত থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত একটি একক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখে।
0 Comments